*****পিপড়া ও ছোটনের গল্প ******
লেখা =---আল-মামুন (****শব্দহীন****)
তিন অক্ষরে একটি সংক্ষিপ্ত বাক্যের উৎপত্তি হয়.. আর বাক্যটির নাম হল জীবন....জীবন হলো আসলে একটি মায়া.. যেটা মানুষের প্রিয় বস্তু..
আজ হতে ঠিক ২২ বছর আগে এই বাক্যের সাথে সম্পর্ক করে পৃথিবীতে এসেছিল ছোটন নামের একটি ছেলে l
দেহের গঠন ছিল একদম পাতলা,উচ্চতা ছিল ছোট গড়নের l
আজকে ছোটন, জীবন নামক মায়া হতে বিদায় নিয়েছে....
এই তো গতকাল রাতে ছোটন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলো.. বাজী ধরে তরল জাতীয় কিছু ইচ্ছে মত খেয়ে বাসায় ফিরলো।ছোটন কি জানতো আজকে তার জীবনের শেষ রাত...আর শুধু ছোটন কেনো, পৃথিবীর কোনো প্রাণীর বুঝার কোনো ক্ষমতা নেই, তার মৃত্যু কবে আসবে...
প্রতিদিনের মতো আজও ছোটনকে সকাল 09.00 am পর্যন্ত কেউ ডাকে নাই... কারণ বাসার সবাই জানে ছোটন সকাল ৯. ০০ না বাজলে উঠবে না... আগে তার বাবা ফজরের নামাজ পড়তে ডাকতো, কিন্তু ছোটন বাবার ডাকে একটাই উত্তর দিতো... ছোটন উত্তরে বলতো... বাবা সকলের ঘুম তা নষ্ট করে তুমি কি মজা পাও বলো তো... জীবন তো কেবল শুরু হলো.. নামাজ পড়ার অনেক টাইম পাবো বাবা, জীবন তো কেবল শুরু হল.. আগে কিছু দিন enjoy করি.. বাবা আর এখন ডাকে না... জেনে গেছে ছোটন কি বলবে....
আজ সকাল ০৯.০০ বেজে গেছে.. কিন্তু ছোটন ঘুম হতে উঠছে না... অনেক ডাকা ডাকি করার পর ও কোন উত্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলো সবাই....
সবাই দেখলো সুন্দর দেহের মানুষ টি নিজের বিছানায় শুয়ে আছে...কিন্তু কথা বলছে না কেনো... কিছুক্ষণ মা বাবা ভাই বোন.. সবাই তার ঘুম ভাঙ্গার ব্যার্থ চেষ্টা করলো কিন্তু কোনো লাভ হল না.. সবার আর বুঝতে বাকি রইলো না. ছোটন আর মায়ার পৃথিবীর ঘুমে ঘুমিয়ে নেই.. সে অন্তিম ঘুমে আচ্ছন্ন....
এখন কিছুক্ষণ আত্মীয় স্বজনের প্রিয় বস্তু হারানোর কান্না শুরু হবে.... কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন এটা চলবে...
সময় অনেক সংক্ষিপ্ত..
কয়েক জন মানুষ ছোটনকে গোসল দিবার জন্য নিয়ে বাইরে গেলো...
আসতে আসতে সব পরণের কাপড় খুলে ফেলা হচ্ছে....কিছুক্ষণে মধ্যে গোসল আরম্ভ হবে.....হ্যাঁ গোসল শেষ হলো...
ছোটনকে সাদা কাফনে মোড়ানো হল,এই পৃথিবীর কোনো দামী বস্তু ছাড়াই.... ছোটনের কাফনে মোড়ানো দেহে কোন পৃথিবীর বস্তু নেই.. কিন্তু একটা
পিপড়া ছোটনের দেহে রয়ে গেছে... পিপড়াটি ছোটনের নরম শরীরের মধ্যে কামড় দিচ্ছে.. কিন্তু ছোটন তাকে প্রতিহত করার কোনো ব্যবস্থা করছে না.. এটা দেখে
পিপড়াটি কামড় দেওয়া থামিয়ে দিলেন....
এখন পিপড়া ও ছোটন দুই জনেই চুপ কেউ কথা বলছে না...
পিপড়া মহোদয় ছোটনের কথা বলার কোনো লক্ষণ না দেখে নিজেই বলতে শুরু করলেন ...
কি খবর তোমার..আজ তুমি আমার সাথে মোকাবেলা করছো না কেনো... কোনো কথা বলছো না আজকে ... আজ তুমি চুপ কেন.. কি হলো আজ তোমার..
--তোমার সব ক্ষমতা কোথায় গেলো, যে ক্ষমতার অধিকার আল্লাহ তোমাকে দান করেছিলো...
--কোথায় তোমার ক্ষমতা, যার সাহায্যে তুমি পৃথিবীর বুকে নেতাগিরি করতে...
--কোথায় তোমার সেই ক্ষমতা যেটার সাহায্যে তুমি সারা রাত মোবাইল ফোনে মেয়ে মানুষের সাথে কথা বলে কাটিয়ে দিতে, যেটা কিনা আল্লাহ তোমাকে বিশ্রাম নিতে প্রদান করেছিলো.. কিন্তু তুমি সেই সময় কথার সাগরে ডুবে থাকতে.. আর যেই সময় আল্লার তোমাকে তার ইবাদাত করতে প্রদান করলো সেই সময়ে তুমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকতে.....
---কোথায় তোমার সেই ক্ষমতা,যেটার সাহায্যে তুমি আমার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে... ও ভাই তুমি মানুষ ছিলে, আমি ছিলাম একটা কীট জাতীয়
পিপড়া.,,তোমার শক্তি অনেক বেশী তাই তোমাকে আমি কখনো পেরে উঠেনি... প্রতিবার আমি যুদ্ধে পরাজিত হয়েছি,কিন্তু আমি হাল ছাড়ার পত্র নয়,আমি শপথ গ্রহণ করে ছিলাম তোমাকে একদিন পরাজিত করব.... আজ সুযোগ পেয়েছি আমি আজ তোমাকে ছাড়বো না....
কিন্তু পিপড়া মহোদয় ছোটনেকে কোনো আঘাত করলো না.. নিজের চোখের পানি ছেড়ে আল্লার কাছে ছোটনের জন্য দোয়া করতে শুরু করলো...
পিপড়া বলতে শুরু করলো "হে আমার প্রভু..আজ কে যে মানুষ টি, মানুষ নাম পাল্টে লাশ নাম গ্রহণ করেছে,ওর ঘরের এক কোণে আমার বাস ছিল... আমি তার সব কিছু দেখেছি...তার সব কাজের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি.. ওকে ক্ষমা করে দাও....
ছোটন আজ পিপড়ের কথায় অনেক ব্যথিত.. ইস্ আর কিছু দিন আগে যদি তোর সাথে আমার কথা হতো... হয়তো আমার সব পাপের জন্য ক্ষমা আবেদন করতে পড়তাম....
সময় শেষ... ছোটনকে তার আপন ঘরে রাখতে কবরস্থানের দিকে সবাই অগ্রসর হল...
পিপড়া আকাশ পানে তাকিয়ে. বললো এটাই বুঝি জীবন ........
(***সমাপ্ত***)
(পুরো কাল্পনিক)
(****শব্দহীন*****)